শুক্রবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৪

পৃথিবীর অদৃশ্য ছাদ!

চির-অন্ধকার মহাসমুদ্রে ভাসমান মুক্তোদানার তুল্য নয়নাভিরাম উজ্জ্বল নীল গ্রহ আমাদের এই পৃথিবী। আমাদের এই পৃথিবীতেই রয়েছে স্রষ্টার এক অনন্য কীর্তি বিষ্ময়কর জীবন। যার অনুরুপতা আমাদের এই মহাবিশ্বে বড়ই দুর্লভ। মৃত্যুময় শীতল অন্ধকারাচ্ছন্ন শুন্যতার মহাসমুদ্রে প্রতি সেকেন্ডে ৩০ কিঃ মিঃ তীব্র গতিবেগ নিয়ে ধাবমান এই পৃথিবীর জীবনের প্রবাহকে অটুট রাখার জন্য মহান স্রষ্টা সৃষ্টি করে রেখেছেন হাজারো বিষ্ময়কর ব্যবস্থা। এমনি একটি জীবন রক্ষাকারী সৃষ্টি উপাদান হল আমাদের বায়ুমন্ডল।

ছবি - Shutter Stock

পৃথিবীর বায়ুমন্ডল, এর জীবমন্ডলের জন্য এক বিষ্ময়কর কৃপা। বায়ুমন্ডল জীবনকে বাঁচিয়ে রেখেছে এক অপূর্ব মহিমায়। আসুন আমরা দেখি কিভাবে বায়ুমন্ডল এক অদৃশ্য ছাদ হয়ে আমাদেরই অজ্ঞাতে আমাদেরকে ধ্বংশের হাত থেকে রক্ষা করে যাচ্ছে প্রতিমুহূর্তে, যার ফলশ্রুতিতে এই পৃথিবীতে জীবন বয়ে চলছে অতি স্বাচ্ছন্দে!
আপনারা জানেন প্রতি মুহূর্তে সূর্যে হাজার হাজার বিস্ফোরণ সংগঠিত হয়। এই বিস্ফোরণগুলি হয় প্রচন্ড শক্তি সম্পন্ন। এক একটি বিস্ফোরণ প্রায় এক বিলিয়ন হাইড্রোজেন বোমার শক্তিতে উৎক্ষিপ্ত হয়ে সৌর গ্যাস ও ধুলিকণাকে প্রচন্ডবেগে চারদিকে ছড়িয়ে দেয়, যা অতি অল্প সময়েই সৌর করণাতে* পৌঁছে যায়¹। এই ধাবমান গ্যাস ও ধুলিকণাকে সৌর বায়ু বা Solar wind বলে।

ছবি - Shutter Stock
সৌর বায়ু প্রতি সেকেন্ডে প্রায় ৫০০ মাইল বেগে ধাবিত হয়ে পৃথিবী এবং সূর্য দূরত্বের ৪০ গুন দুরত্বে অবস্থিত প্লুটো পর্যন্ত খুব স্বাচ্ছন্দে পৌঁছে যায়। একটি সৌর বিস্ফোরণের কমবেশি ১০ দিনের মধ্যে সৌর বায়ু পৃথিবী এলাকায় আঘাত হানে। এই সৌর বায়ু জীবদেহের জন্য অত্যান্ত ধ্বংসাত্বক। জীবদেহের সংস্পর্শে আসার আসার সাথে সাথেই এই সৌর বায়ু দেহ-কোষের অনিবার্য মৃত্যু কিংবা বিকৃতি ঘটাতে সক্ষম, যার ফলশ্রুতিতে ক্যান্সার অবশ্যম্ভাবী। এই সৌর বায়ু পৃথিবীর বায়ুমন্ডলকে আঘাত করে প্রচন্ড শক্তিতে; আমাদের জানার বাইরে থেকে বায়ুমন্ডল এ সৌরবায়ুকে প্রচন্ড প্রতাপে ফিরিয়ে দেয়, যারফলে অভিশপ্ত এ বায়ু জীবমন্ডলের উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে না। নিশ্চিত মৃত্যু প্রতিদিন, প্রতিক্ষণ পৃথিবীর চারপাশে খেলে যায়, খেলতে থাকে! মহাকল্যানকর এ বায়ুমন্ডল আমাদের তা এতটুকুও বুঝতে দেয় না। বেঁচে থাকে জীবন!!!
আপনারা কি উল্কা পতনের দৃশ্য দেখেছেন? আহ! কতই না নানয়নাভিরাম সে দৃশ্য! রাতের আকাশে উল্কা পতনের দৃশ্য দেখে আমরা আনন্দিত হই। কিন্তু কখনো কি ভেবেছেন এরই মাঝে লুকিয়ে আছে আমাদের জন্য এক মহা-ভয়ংকর দুঃসংবাদ! যা বিজ্ঞানকে ভাবিয়ে তুলেছে গোটা জীবমন্ডলের অস্তিত্ব সম্পর্কে!!

ছবি - Shutter Stock
মহাশুন্য হতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ২০ লাখ উল্কপিন্ড পৃথিবী পৃষ্ঠের দিকে বিপুল গতিতে ছুটে আসে। এরা যখন পৃথিবীর মধ্যাকর্ষণ বলয়ে আটকে যায় তখনই তারা বায়ুমন্ডলের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। সেখানে বাতাসের কণাদের সাথে ঘর্ষনের ফলে জ্বলে উঠে উল্কাপিন্ডগুলি। বায়ুমন্ডলের গভিরতা বাড়ার সাথে সাথে এদের উপর ঘর্ষনের প্রচন্ড চাপ পড়ে এর ফলে তীব্র উত্তাপে বেশিরভাগ উল্কাপিন্ডগুই পুড়ে ছাই হয়ে যায়, পৃথিবীর মাটিতে শুধু এদের ছাই-ভষ্ম গুলি পতিত হয়। এভাবেই প্রতিনিয়ত বায়ুমন্ডলের প্রতিরোধ্যতার মুখে পরাজিত হতে থাকে পৃথিবীবাসির আতংক উল্কাপিন্ডরা।

ছবি - Shutter Stock
মহাশুন্যকে যদি শুধু শুন্য ধারণা করা হয় তাহলে করা হবে এক মারাত্মক ভুল। মহাশুন্য মূলতঃ অসংখ্য শক্তিকণা বা অতিক্ষুদ্র বস্তুকণার এক মহা-বিশাল সমুদ্র। আপনি যদি কখনো বায়ুমন্ডলের শক্তিশালী আবরণকে ভেদ করে কখনো বেরিয়ে যেতে পারেন, তবে সেখানে আপনার দেহের প্রতি বর্গইঞ্চিতে প্রতি সেকেন্ডে ৪ থেকে ৫ টি তেজকণা আঘাত হানবে। তীব্র গতিবেগ ও তেজস্ক্রিয়তার গুণে তারা দেহের কোষগুলোকে ভেঙে টুকরো টুকরো করে দেবে। জীবদেহে এমন মহাজাগতিক রশ্মির সরাসরি আপাতন দেহকোষ-কলায় অযুথ লক্ষ ক্যান্সার কোষ তৈরী করে ফেলবে অতিঅল্প সময়েই। পৃথিবী যদি কোন কারণে এই জীবনঘাতী মহাজাগতিক রশ্মিদের প্রবেশের জন্য উন্মুক্ত হত, তাহলে এই পৃথিবীর জীবমন্ডল অনেক আগেই ঘুমিয়ে পড়ত চিরন্তন মৃত্যু শয্যায়।
আমরা এ পর্যায়ে মহাজাগতিক রশ্মিদের কিছু রহস্যজনক গুণাগুণের বিশ্লেষন করতে পারি। বায়ুমন্ডলের গুণাগুণ, পৃথিবীর চৌম্বক গু্ণাগুণ আর মহাজাগতিক রশ্মিদের গুণাগুণে রয়েছে এক আশ্চর্য রকমের সমন্বয়। তীব্র গতিসম্পন্ন (আলোর গতি) অতি সূক্ষ্ম এ সকল চার্জযুক্ত মহাজাগতিক কণিকাগুলো পৃথিবীর চৌম্বক শক্তির আশ্চর্য গুনণাগুণের সংগে অপূর্বভাবে সমন্বিত ও বিসংশ্লিষ্ট। পৃথিবীর চৌম্বক শক্তি মহাজাগতিক ক্ষতিকর কণিকাগুলোকে বিদ্যুত-চৌম্বকীয় প্রভাবে মানুষ ও জীবমন্ডলীর এলাকা অর্থাৎ নিরক্ষীয় অঞ্চল হতে টেনে ও ছেঁকে নিয়ে যায় মেরু অঞ্চলদ্বয়ের দিকে, যেখানে জীবন নেই। জীবনকে নিরাপদ করার জন্য মহাজাগতিক কণা আর পৃথিবীর চৌম্বকত্বের এ সমন্বয় কত বিস্ময়কর! তারপরেও যে সব শক্তি কণা ভূ-চৌম্বকত্বের প্রভাবকে অগ্রাহ্য করে ছুটে আসে পৃথিবীর দিকে, তাদের জন্যও মহান স্রষ্টার সৃষ্টিতে রয়েছে এক অদৃশ্য প্রতিরোধ ব্যবস্থা। আপনারা জানেন আমাদের বায়ুমন্ডল স্তরে স্তরে গঠিত।

ছবি - Shutter Stock
বায়ুমন্ডলের প্রকৃতি এমন যে, তার পুরত্ব ভেদ করে কেবল কল্যাণকর রশ্মি তরঙ্গ পৃথিবী পৃষ্ঠ পর্যন্ত এসে পৌঁছাবে। জীবন রক্ষার জন্য যে রশ্মিগুলো না হলেই নয়, তাদের এ বায়বীয় আস্তরন ভেদ করতে কোন বাধা নেই, কিন্তু মানুষ ও জীবজগতের জন্য ক্ষতিকর রশ্মিসমূহের কোন প্রবেশ অধিকার নেই! উদাহরণস্বরূপ, দূরবর্তী অতি বেগুনী রশ্মি (ফার আল্ট্রাভায়োলেট রে) বায়ুমন্ডলীয় F-region -এ এসে বায়ুমন্ডল কর্তৃক (ওজন গ্যাস) শোষিত হয়ে যায়। এক্স-রে E-region -এ এসে শোষিত হয় ও মহাজাগতিক রশ্মিসমূহ স্ট্রেটোস্ফিয়ারে এবং ট্রপোপজফিয়ারে এসে নিঃশেষ হয়ে যায়। কোটি কোটি মাইলের মহাযাত্রা মাত্র কয়েক মাইলের পথকে অতিক্রম করতে এসে ক্লান্ত হয়ে পড়ে, নিঃশেষ হয়ে যায়।
Radiation of atmosphere
লক্ষ লক্ষ উল্কাপতন, জীবন বিঘাতী মহাগাগতিক রশ্মি, সৌর ঝঞ্চা আর সূর্যের অবলোহিত রশ্মির উত্তাপ থেকে জীবনকে অভিনব কৌশলে রক্ষা করে চলছে এই বায়ুমন্ডল। সৃষ্টিতে এর চাইতে সুরক্ষিত ছাদ আর নেই।
আশ্চর্য হবেন যে, প্রাণদানকারী অবলোহিত রশ্মি বা ইনফ্রারেড-রে পৃথিবীতে প্রবেশের জন্য নিরুপিত রয়েছে এক অতি শূক্ষ মাত্রা। এ প্রাণ দানকারী ইনফ্রারেড-রে নিজেও কিন্তু প্রাণ-বিঘাতী। এ সৃষ্টি ব্যবস্থায় একে অপূর্বভাবে ছেঁকে দেয়া হয়, কমিয়ে আনা হয় এক সুনির্দিষ্ট পরিমাপে। Kenth F. Weaver এর লেখা থেকে আমরা তার চিত্রটি পাই - In case of infrared, much of the radiation is blocked by water vapour in the atmosphere, but significant wavelengths in infrared still get through.² জীবনের জন্য যেটুকু প্রয়োজন, কেবল ততটুকু ইনফ্রারেড-রে বায়ুমন্ডলীয় ছাঁকুনি পেরিয়ে আমাদেরকে প্রতিদিন জীবন্ত করে যায়। এ ব্যাবস্থাটি না থাকলে পৃথিবীর জীবমন্ডল সূর্যের অত্যান্ত লয়কারক (lethal) রশ্মির উত্তাপে পুড়ে ছাই হয়ে যেত। আবার যেটুকু রশ্মি আমরা আজ পেয়ে থাকি সেটুকু কমতি হলে জীবন মৃত্যু-শীতলতার দিকে এগিয়ে যেতে থাকত আস্তে আস্তে, নিরক্ষঈয় অঞ্চল ছাড়া সর্বত্র পানি জমাট বেঁধে বরফ হয়ে যেত; পৃথিবী এমন এক নতুন চেহারা পেত যার সাথে আমরা পরিচিত নই; যার কথা আমরা ভাবতেও পারি না।

ছবি - Shutter Stock
দিনের বেলা সূর্যতাপ যে উত্তাপের সঞ্চয় করে পৃথিবীর কোন পৃষ্ঠ রাতের বেলা তা যদি সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে ফেলে, তবে সেই পৃষ্ঠটি অতিদ্রুত বরফ জমার তাপাঙ্কে পৌঁছে যাবে। এ ক্ষতিকর পরিস্থিতি যাতে তৈরী না হয় সে জন্য বায়ুমন্ডলকে পালন করতে হয় এক অনন্য সাধারণ ভূমিকা। পৃথিবী হতে বিকরিত তাপমাত্রার ২০% বায়ুমন্ডল ধরে রাখে, আর এ উত্তাপ আমাদের জানার ও বুঝবার অজ্ঞাতে জীবনকে বাঁচিয়ে রাখে। সোলার ঊইন্ড, উল্কা পতন, সৌর ও মহাজাগতিক ক্ষতিকর রশ্মি, মানুষ সৃষ্ট পরিবেশ দূষণের চাপ ইত্যাদি সবই বায়ুমন্ডলকে একা বইতে হয়। বিজ্ঞান আমাদেরকে আরও জানতে সাহায্য করেছে যে, বায়ুমন্ডল পৃথিবীবাসির জন্য ক্ষতিকর রশ্মি, সৌর-বায়ু কিংবা উল্কা পতন রোধ অথবা জীবনী শক্তি ইনফ্রারেড-রে, দৃশ্য আলো, বেতার তরংগ, ও নিকটবর্তী অতিবেগুনী আলোর অনুমোদন ইত্যাদি কাজ ছাড়াও জীবনকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য পালন করছে আরও অনেক প্রতিরক্ষা দায়িত্ব। এই মহা-ব্যবস্থার মাঝেই রচিত হয়েছে জীবন রক্ষার এক নিগূঢ় রহস্য।
বায়ুমন্ডলের অপ্রতিরোধ্য নিরাপদ রক্ষাবর্মের আচ্ছাদনের আশ্রয়ে বসবাসকারী পৃথিবীর জীবমন্ডলের সকল প্রাণ, তাদের উপরে ঘটে যাওয়া হাজার হাজার ঝড় ও প্রলয়ঙ্কর মৃত্যর প্রসারিত থাবা থেকে বেখবরই থেকে যায়। এভাবেই বায়ুমন্ডলের অদৃশ্য ছাদের নিচে নিশ্চিন্তে প্রবাহিত হচ্ছে জীবন।
সৌর 'করোনা' হল সূর্যের প্রান্তসীমার পর প্রসারিত বিশাল শূন্য, প্লুটো কিংবা তারও পরে যার বিস্তৃতি।
আমি লেখালেখি করতে পারি না, তবে লেখালেখিতে আমার আগ্রহ আছে। আর এটি হল আমার প্রচেষ্টার শুরু। আমার পড়া বিভিন্ন বই এবং ইন্টারনেট হতে আমি এই লেখাটি তৈরি করেছি। অনেক অনেক লাইন প্রায় হুবহু তুলে দিয়েছি, আশা করি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আশা করছি পরবর্তী লেখা গুলো নিজের মত করেই সাজিয়ে লিখতে পারবো।

I would like to get on Facebook 

"click here

again.


Post by ................... H.M.Shahed Salman


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন